ASHUTOSH-SMRITIKATHA
আশুতোষ-স্মিৃতিকথা
PUBLICATION: PARUL PRAKASHANI পারুল প্রকাশনী
LANGUAGE : BENGALI
দীনেশচন্দ্র সেন বিরচিত ‘আশুতোষ-স্মৃতিকথা’ শুধুই ভারতীয় রেনেসাঁসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক মনীষীর প্রামাণ্য জীবন-চরিতমাত্র নয়, বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশের এক বিশ্বস্ত ইতিবৃত্তও। প্রসিদ্ধ গণিতজ্ঞ, আইনজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদ, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় নিজে সাহিত্যিক ছিলেন না, কিন্তু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশের ইতিহাসে যে ভূমিকা তিনি গ্রহণ করেছিলেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা তথা আধুনিক ভারতীয় ভাষা-সাহিত্য চর্চার ব্যবস্থা হয় তাঁরই উদ্যোগে। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘জাতীয় সাহিত্য’ নামক প্রবন্ধ সংকলন তাঁর সাহিত্যচিন্তার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। কিন্তু গণিতজ্ঞ, আইনজ্ঞ কিংবা শিক্ষাবিদ আশুতোষ ছাড়াও আর এক আশুতোষের খোঁজ মিলবে এ-বইয়ে। নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাপৃত থেকেও দেশের সঙ্গে নানাসূত্রে জড়িত ছিলেন এই মহাপ্রাণ মানুষটি। পরোপকার-ব্রত ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। আপাত কাঠিন্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষ আশুতোষের সেই কোমল হৃদয়কে উন্মোচিত করে এক ভিন্ন মাত্রায়।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গবেষক এবং রচয়িতা দীনেশচন্দ্র সেনের জন্ম ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৩ নভেম্বর। ১৮৯০-এ প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম রচনা ‘কুমার ভূপেন্দ্রসিংহ’। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে লিখিত, ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ এবং পরে ইংরেজিতে ‘History of Bengali Language and Literature’ (১৯১১) তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। ১৯০৯ থেকে ১৯৩২ পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক ও অধ্যাপকরূপে কাজ করেন। এই সময়কালে দীনেশচন্দ্র ‘The Vaishanava Literature Medieval of Bengal’ (১৯০৭), ‘Chaitanya and his Companions’ (১৯১৭), ‘The Folk Literature of Bengal’ (১৯২০), ‘The Bengali Ramayana’ (১৯২০), ‘Bengali Prose Style’ (১৯২১) প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ প্রকাশিত হয় ১৯২৩-এ। ‘বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়’ (১ম ও ২য় ১৯১৪) নামে প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের একটি মূল্যবান সংকলনও তিনি প্রকাশ করেন।
বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটি হল ‘বৃহৎবঙ্গ’ (১ম খণ্ড ১৯৩৫, ২য় ১৯৩৫)। তাঁর মৌলিক রচনাগুলির মধ্যে ‘তিনবন্ধু’ (১৯০৪), ‘আলোকে আঁধারে’ (১৯২৫), ‘চাকুরীর বিড়ম্বনা’ (১৯২৬), ‘মামুদের শিবমন্দির’ (১৯২৮) প্রভৃতি উপন্যাস, ‘বেহুলা’ (১৯০৭), ‘সতী’ (১৯০৭), ‘ফুল্লরা’ (১৯০৭), ‘জড়ভরত’ (১৯০৮), ‘ধরাদ্রোণ ও কুশধ্বজ’ (১৯১৩) প্রভৃতি পৌরাণিক কাহিনি উল্লেখোগ্য। ‘সাঁঝের ভোগ’, ‘মুক্তচুরি’, ‘রাখালের রাজনি’, ‘রাগরঙ্গ ও গায়ে হলুদ’ নামক পাঁচটি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক কাহিনিরও তিনি রচয়িতা। ১৯২২-এ প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী_‘ঘরের কথা ও যুগসাহিত্য’। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর দীনেশচন্দ্র পরলোক গমন করেন।